২০২৫-এ এনটিআরসিএ ই-রেজিস্ট্রেশন

Written by Jarif Al Hadee

Published on:

এনটিআরসিএর ২০২৫ ই-রেজিস্ট্রেশন নির্দেশিকা অনুসরণ করে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ করুন। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া, সময়সীমা এবং টিপস জেনে নিন যাতে আপনার প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলো সহজে পূরণ হয়।

WhatsApp Group Join Now

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং স্বচ্ছ হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ই-রেজিস্ট্রেশনের পথনির্দেশ করে। এই নির্দেশিকা অনুসারে, শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ই-রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। এতে শূন্য পদের তালিকা জমা দেওয়া এবং নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া সহজ হয়। আজকের এই লেখায় আমরা এই প্রক্রিয়ার সব দিক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যাতে আপনার প্রতিষ্ঠান এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে। এনটিআরসিএ ই-রেজিস্ট্রেশন শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়, বরং শিক্ষা মানোন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

২০২৫-এ এনটিআরসিএ ই-রেজিস্ট্রেশন

এনটিআরসিএ ই-রেজিস্ট্রেশন হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া, যা শিক্ষক নিয়োগের পূর্বশর্ত। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য এনটিআরসিএর ডাটাবেসে সংরক্ষণ করে। ফলে, শূন্য পদের চাহিদা (ই-রিকুজিশন) জমা দেওয়া এবং নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া সম্ভব হয়। নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ই-রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান ই-রিকুজিশন দিতে পারবে না এবং নিয়োগের জন্য বিবেচিতও হবে না। এটি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ করে তোলে এবং জালিয়াতি রোধ করে।

শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ই-রেজিস্ট্রেশনের ভূমিকা

শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত প্রার্থীদের মেধা এবং পছন্দের ভিত্তিতে সুপারিশ দেয়। কিন্তু এর জন্য প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে ই-রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এতে শূন্য পদের সঠিক তথ্য অনলাইনে জমা হয়, যা অফলাইন বা ইমেইলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় না। ফলে, নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত এবং নির্ভুল হয়। ২০২৫ সালে এই প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা হয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই অংশ নিতে পারে। এনটিআরসিএ ই-রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তথ্য গ্রহণ করবে না, তাই এটি উপেক্ষা করা যায় না।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ

ই-রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি মৌলিক যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। প্রথমত, প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত EIIN নম্বরধারী হতে হবে। এছাড়া, একাডেমিক স্বীকৃতি এবং MPO (মাসিক পে ও অ্যালাউন্স) ভুক্তি থাকা আবশ্যক। এই শর্তগুলো না থাকলে রেজিস্ট্রেশন সম্ভব নয়। নির্দেশিকায় উল্লেখ আছে, শুধুমাত্র এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানই এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। এটি নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোই শিক্ষক নিয়োগের সুবিধা পাবে।

EIIN এবং MPO সংক্রান্ত বিস্তারিত শর্ত

EIIN (Educational Institution Identification Number) হলো প্রতিষ্ঠানের অনন্য পরিচয়। এটি ছাড়া রেজিস্ট্রেশন শুরু করা যায় না। MPO ভুক্তি মানে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি সহায়তা পাচ্ছে, যা শিক্ষক নিয়োগের জন্য অপরিহার্য। নতুন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (উএসইও) এই তথ্য যাচাই করবেন। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবেই রেজিস্ট্রেশন এগোবে। এই শর্তগুলো পূরণ করে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক নিয়োগে অগ্রগামী হতে পারে।

ই-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার ধাপে ধাপে নির্দেশনা

ই-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনলাইন ভিত্তিক এবং সহজ। এটি www.ntrca.gov.bd বা ngi.teletalk.com.bd-এর মাধ্যমে করতে হয়। প্রথমে উএসইও-এর সাহায্য নিন, তারপর প্রতিষ্ঠান প্রধান লগইন করে তথ্য পূরণ করবেন। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যায়। নিচে ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো।

নতুন ই-রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি

নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমে উএসইও-এর সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি EIIN, একাডেমিক স্বীকৃতি এবং MPO তথ্য যাচাই করবেন। যাচাই হয়ে গেলে উএসইও তার লগইন আইডি দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন এবং ‘Add more institute’ অপশনে EIIN, প্রতিষ্ঠানের নাম এবং প্রধানের মোবাইল নম্বর দিয়ে সেভ করবেন। টেলিটক থেকে এসএমএসে প্রধানের আইডি-পাসওয়ার্ড আসবে। এরপর প্রধান লগইন করে প্রোফাইল পূরণ করবেন।

প্রোফাইল আপডেট এবং তথ্য পূরণ

পুরনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রোফাইল আপডেট বাধ্যতামূলক। লগইন করে ‘Institute Profile’-এ প্রতিষ্ঠানের MPO অথরিটি, ধরণ, স্ট্যাটাস দিন। প্রধানের নাম, পদবি, NID, জন্মতারিখ, ঠিকানা, ছবি, স্বাক্ষর, NID স্ক্যান আপলোড করুন। গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের তথ্যও একইভাবে দিন। সব তথ্য সঠিক হলে সেভ করুন। এতে ই-রিকুজিশনের পথ খুলে যাবে।

ই-রিকুজিশন জমা দেওয়ার নিয়ম

ই-রেজিস্ট্রেশন শেষ হলে শূন্য পদের চাহিদা অনলাইনে জমা দিন। এটি অফলাইনে গ্রহণ করা হয় না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র এই প্ল্যাটফর্মে জমা দিলে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া যাবে। এতে প্রার্থীদের পছন্দ এবং মেধার ভিত্তিতে ম্যাচিং হয়।

২০২৫ সালের ই-রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা এবং গুরুত্বপূর্ণ তারিখ

এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ: সময়সীমা। ২০২৫ সালে ই-রেজিস্ট্রেশন ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই তারিখের মধ্যে নতুন রেজিস্ট্রেশন এবং প্রোফাইল আপডেট সম্পন্ন করতে হবে। পরে এটি সম্ভব হবে না। নিয়োগ সুপারিশ বিজ্ঞপ্তির আগেই এই কাজ শেষ করুন। সময় না মানলে প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবে। এই সময়সীমা মেনে চললে আপনার প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ হবে।

ই-রেজিস্ট্রেশনের সময় কয়েকটি সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন লগইন আইডি না পাওয়া বা তথ্য যাচাইয়ের বিলম্ব। এর সমাধান: উএসইও-এর সাথে যোগাযোগ করুন এবং ওয়েবসাইটের হেল্প সেকশন দেখুন। যদি এসএমএস না আসে, তাহলে টেলিটক অফিসে যান। তথ্য ভুল হলে আপডেট করে সেভ করুন। এই টিপস মেনে সমস্যা এড়িয়ে যান এবং প্রক্রিয়া সফল করুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

ই-রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কি শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব?

না, নির্দেশিকা অনুসারে ই-রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত ই-রিকুজিশন জমা দেওয়া যায় না এবং নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া যায় না।

নতুন প্রতিষ্ঠান কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করবে?

উএসইও-এর সাহায্য নিয়ে EIIN যাচাই করে ওয়েবসাইটে অ্যাড করুন। ২৪ ঘণ্টায় আইডি পাবেন।

সময়সীমা কতদিন?

২৩ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। এর পর আপডেট সম্ভব নয়।

কোন তথ্য আপলোড করতে হয়?

প্রধান এবং চেয়ারম্যানের NID, ছবি, স্বাক্ষর, ঠিকানা ইত্যাদি। সব স্ক্যান কপি দিন।

ই-রিকুজিশন কী?

শূন্য পদের অনলাইন চাহিদা জমা, যা নিয়োগের ভিত্তি।

এনটিআরসিএ ই-রেজিস্ট্রেশন ২০২৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সোনার সুযোগ। এটি মেনে চললে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হয়ে উঠবে, যা শিক্ষা মান বাড়াতে সাহায্য করবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। আরও তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট দেখুন। শিক্ষা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, তাই এই ধাপগুলো গুরুত্ব দিয়ে নিন।

DMCA.com Protection Status
Jarif Al Hadee

হ্যালো, আমি জারীফ আল হাদী- Jarif Al Hadee। আমি এই ওয়েবসাইটের এডমিন এবং একজন লেখক। আমি দীর্ঘ ৪ বছর ধরে শিক্ষা সম্পর্কিত লেখালেখির সাথে জড়িত। আমি পাঠকদের মানসম্মত ও আপডেটেড তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি আমার লেখাগুলোতে। যোগাযোগ- admissiongodesk@gmail.com।