বাংলাদেশের কৃষক রচনা ২০ পয়েন্ট – একদম সহজ রচনা

Written by Jarif Al Hadee

Published on:

বাংলাদেশের কৃষক রচনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। কৃষকের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিল্পায়নের ভূমিকা, তাদের চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের উপায় সম্পর্কে জানুন।

WhatsApp Group Join Now

ভূমিকা

বাংলাদেশ, সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনের মূল ভিত্তি হলো কৃষি। কৃষকরা এই দেশের মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত, যারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করেন। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন, এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষির সঙ্গে জড়িত। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল শুধু আমাদের খাদ্যের চাহিদা মেটায় না, বরং শিল্প ও রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই রচনায় বাংলাদেশের কৃষকদের জীবন, তাদের অবদান, চ্যালেঞ্জ এবং উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশের কৃষক ও তাদের গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কৃষকরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং শিল্পের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করেন। ধান, পাট, আখ, শাকসবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে তারা জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, পাট ও চা রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কৃষকদের শ্রম ছাড়া দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা কল্পনা করা অসম্ভব।

কৃষকদের অতীত ইতিহাস

একসময় বাংলাদেশ ছিল ধনধান্যে পূর্ণ। গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু ছিল গ্রামীণ সমৃদ্ধির প্রতীক। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার ভ্রমণ বৃত্তান্তে বাংলার কৃষকদের সমৃদ্ধ জীবনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তখন জমির পরিমাণ ছিল পর্যাপ্ত, আর উর্বর মাটিতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জমির স্বল্পতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।

জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষকের ভূমিকা

কৃষকরা জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পের কাঁচামাল এবং রপ্তানি আয়ের বড় অংশ কৃষকদের উপর নির্ভর করে। কৃষি উৎপাদন কমে গেলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পক্ষান্তরে, ভালো ফসল উৎপাদন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। কৃষকদের উৎপাদিত ধান, পাট, আখ, চা ইত্যাদি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি।

খাদ্য উৎপাদনে কৃষকের ভূমিকা

কৃষকরা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের প্রধান উৎস। ভাত, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস—সবই কৃষকদের পরিশ্রমের ফল। বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষকদের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। তবে জমির স্বল্পতা, আধুনিক চাষাবাদের অভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা এখনও চ্যালেঞ্জিং।

জাতীয় আয় ও শিল্পায়নে কৃষকের অবদান

কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাট, চা, তুলা ইত্যাদি রপ্তানি করে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এছাড়া, কৃষি-নির্ভর শিল্প যেমন পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্প, চিনিশিল্প ইত্যাদির কাঁচামাল কৃষকদের কাছ থেকে আসে। কৃষকরা শুধু খাদ্যই নয়, শিল্পের শ্রমিকদের খাদ্যও সরবরাহ করেন।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষকের ভূমিকা

কৃষি বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ জনশক্তির কর্মসংস্থানের উৎস। কৃষকরা নিজেরা কাজ করেন এবং কৃষিশ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। এছাড়া, কৃষি-নির্ভর শিল্পে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।

কৃষকদের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের কৃষকদের জীবন এখন অনেক ক্ষেত্রে দুর্বিষহ। অনেক কৃষক দারিদ্র্য, ঋণের বোঝা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হতাশায় ভুগছেন। উচ্চফলনশীল ধানের প্রচলন ফসল উৎপাদন বাড়ালেও, ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন না। ভূমিহীন কৃষকদের অবস্থা আরও শোচনীয়।

কৃষকদের দুরবস্থার কারণ

কৃষকদের দুরবস্থার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

  1. প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি: আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে কৃষকরা এখনও লাঙল ও গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল।
  2. জমির স্বল্পতা: জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেছে।
  3. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, ঝড় ইত্যাদি ফসলের ক্ষতি করে।
  4. অতিরিক্ত রাসায়নিক সার: অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
  5. ঋণের বোঝা: চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষ করায় কৃষকরা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।

কৃষকদের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ

সরকার কৃষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, কৃষিঋণের সুদ মওকুফ, এবং ভূমিহীন কৃষকদের জন্য ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রদান করছে, যেমন ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে ১১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কৃষিকে বদলে দিয়েছে। উচ্চফলনশীল বীজ, জিন প্রযুক্তি, এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ফসল উৎপাদন বাড়িয়েছে। জাপানের মতো দেশ কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করে। বাংলাদেশেও ট্রাক্টর, সেচ ব্যবস্থা এবং উন্নত বীজ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

উপসংহার

বাংলাদেশের কৃষকরা দেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং শিল্পায়নের মূল স্তম্ভ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া দেশের অগ্রগতি অসম্ভব। তবে, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তাদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃষকদের জন্য আরও প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ, এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা গেলে তারা দেশের উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন। আশা করি, এই রচনা পড়ে আপনি বাংলাদেশের কৃষকদের গুরুত্ব ও তাদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

DMCA.com Protection Status
Jarif Al Hadee

হ্যালো, আমি জারীফ আল হাদী- Jarif Al Hadee। আমি এই ওয়েবসাইটের এডমিন এবং একজন লেখক। আমি দীর্ঘ ৪ বছর ধরে শিক্ষা সম্পর্কিত লেখালেখির সাথে জড়িত। আমি পাঠকদের মানসম্মত ও আপডেটেড তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি আমার লেখাগুলোতে। যোগাযোগ- admissiongodesk@gmail.com।