ক্রিকেটের উত্তেজনাপূর্ণ জগত নিয়ে এই রচনায় জানুন ইতিহাস, নিয়ম, উপকরণ এবং বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্য। ক্লাস ৭ এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা, যা আপনার প্রিয় খেলা ক্রিকেটকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট রচনা Class 7
ক্রিকেট খেলাটা আমার খুব প্রিয়। এই খেলা দেখলে বা খেললে মনটা ভরে যায়। ক্রিকেটকে অনেকে বলে খেলার রাজা। এর মধ্যে একটা বিশেষ মজা আছে, যাকে বলে গৌরবময় অনিশ্চয়তা। অর্থাৎ, কোনো ম্যাচের ফলাফল আগে থেকে বলা যায় না। এই অনিশ্চয়তাই ক্রিকেটকে এতো জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং আমাদের বাংলাদেশে ক্রিকেটের দাপট অপরিসীম। আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েরা স্কুলের মাঠে বা রাস্তায় ক্রিকেট খেলে। এই খেলা শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং শরীর ফিট রাখে এবং মনকে শান্ত করে। আজ এই রচনায় আমরা ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করি।
ভূমিকা
ক্রিকেটের জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডে। অনেক শতাব্দী আগে, আঠারো শতকে এই খেলার নিয়মগুলো গড়ে ওঠে। তখন ইংল্যান্ডের ধনী লোকেরা অবসর কাটাতে এই খেলা শুরু করে। তারা মাঠে দাঁড়িয়ে বল ছুঁড়ে, ব্যাট দিয়ে আঘাত করে মজা নিত। ধীরে ধীরে এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক খেলায় পরিণত হয়। উনিশ শতকে ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশ নিয়ে যায়, যেমন ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া। সেখানে ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়ে। আজকের দিনে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটা।
বাংলাদেশে ক্রিকেট এলে সবাই উন্মাদ হয়ে যায়। ১৯৮০-এর দশকে আমাদের দেশ টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পায়। তারপর থেকে আমাদের খেলোয়াড়রা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে। ক্রিকেটের ইতিহাস জানলে বোঝা যায়, এটা শুধু খেলা নয়, একটা সংস্কৃতি। এই খেলা মানুষকে একত্রিত করে। ম্যাচের সময় পুরো দেশ একসাথে হয়ে যায়। ক্রিকেটের এই ঐতিহ্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
ক্রিকেট খেলার উপকরণ
ক্রিকেট খেলতে কিছু জিনিস অত্যন্ত দরকার। প্রথমেই বলি মাঠের কথা। মাঠটা গোলাকার হয়, মাঝখানে দুটো ক্রিজ থাকে। প্রত্যেক ক্রিজে তিনটা স্ট্যাম্প লাগানো হয়, যার উপর বেলস রাখা হয়। ব্যাটসম্যানরা এই স্ট্যাম্পগুলো রক্ষা করে। বলটা লাল রঙের, চামড়ার তৈরি, ভারী। ব্যাটটা কাঠের, লম্বা এবং চওড়া। গ্লাভস, প্যাডস, হেলমেট – এগুলো খেলোয়াড়দের রক্ষা করে।
দুটো দল মিলে ২২ জন খেলোয়াড় খেলে। প্রতি দলে ১১ জন। বোলার বল ছোঁড়ে, ব্যাটসম্যান আঘাত করে। ফিল্ডাররা বল ধরে বা ছুটে রান আটকায়। এই উপকরণগুলো ছাড়া ক্রিকেট অসম্পূর্ণ। ছোটখাটো ম্যাচে প্লাস্টিকের বলও ব্যবহার হয়, কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে সব অফিসিয়াল জিনিস লাগে। এই উপকরণগুলো খেলাকে নিরাপদ এবং মজাদার করে তোলে।
ক্রিকেট খেলার সহজ নিয়ম
ক্রিকেটের নিয়মগুলো একটু জটিল মনে হলেও সহজেই শিখা যায়। মাঠের মাঝে ২২ গজ দূরে দুটো ক্রিজ থাকে। বোলার ছুটে এসে বল ছোঁড়ে, লক্ষ্য করে স্ট্যাম্প। ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করে দূরে পাঠায়। তারপর দুজন ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদল করে রান করে। প্রত্যেক প্রান্ত বদল এক রান। যদি বল সীমানা ছুঁয়ে যায়, তাহলে ৪ রান। শূন্যে গিয়ে সীমানা পার হলে ৬ রান।
একটা ওভার মানে ৬টা বল। বোলার ৬টা বল ছোঁড়ার পর অন্য বোলার আসে। ব্যাটসম্যান আউট হয় যদি বল স্ট্যাম্পে লাগে (বোল্ড), বা ক্যাচ হয়, বা রান আউট হয়। ১০টা উইকেট পড়লে ইনিংস শেষ। টস জিতে দল সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাট করবে না বোলিং। এই নিয়মগুলো মেনে খেলা চলে। ক্রিকেটের নিয়ম শিখলে খেলাটা আরও উপভোগ্য হয়।
কোন কোন দেশে ক্রিকেটের দাপট
ক্রিকেট বিশ্বের অনেক দেশে খেলা হয়, কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে মাত্র ১২টা দেশ। এর মধ্যে আছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ে। এই দেশগুলোতে ক্রিকেট একটা ধর্মের মতো।
অন্যান্য দেশে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নেপাল, স্কটল্যান্ডে ক্রিকেট দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশে ক্রিকেট শুরু হয়েছে ১৯৭০-এর দশকে। আজ এটা আমাদের জাতীয় খেলা। এই দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখলে মনে হয় বিশ্ব একটা বড় মাঠ। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর তালিকা দেখলে বোঝা যায় এর বিস্তার কতটা।
ক্রিকেট ম্যাচের বিভিন্ন প্রকার
ক্রিকেটের ম্যাচ বিভিন্ন ধরনের। টেস্ট ম্যাচ সবচেয়ে লম্বা, ৫ দিনের। এতে প্রত্যেক দল দুবার ব্যাট করে। এটা ধৈর্যের খেলা। ওয়ানডে ম্যাচ একদিনের, ৫০ ওভার করে দল। এতে দ্রুত রান তাড়া চলে। T20 ম্যাচ সবচেয়ে ছোট, ২০ ওভার করে। এটা উত্তেজনায় ভরা, মাত্র ৩ ঘণ্টার।
প্রথমে টেস্টই ছিল প্রধান, কিন্তু এখন T20-এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আইপিএল-এর মতো লিগ T20-কে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। কোন প্রকারই খারাপ নয়, সবার নিজস্ব মজা। ক্লাস ৭ এর ছাত্ররা T20 দেখে উত্তেজিত হয়।
ক্রিকেটের বিশ্বকাপ
ক্রিকেট বিশ্বকাপ একদিনের ম্যাচের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। ১৯৭৫ সালে প্রথম হয় লর্ডসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল। তার আগে ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে প্রথম ওয়ানডে হয়, বৃষ্টির কারণে। বিশ্বকাপ প্রতি ৪ বছরে হয়।
প্রত্যেক বিশ্বকাপে অসাধারণ মুহূর্ত আছে। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের জয়, ২০১১-এ ভারতের। এটা ক্রিকেটের উৎসব। বাংলাদেশও এতে অংশ নেয়। বিশ্বকাপ দেখলে মনে হয় সব দেশ একসাথে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বিস্ময়কর সাফল্য
বাংলাদেশের ক্রিকেট টাইগাররা বিশ্বকাপে অনেকবার চমক প্রদর্শন করেছে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠে। মাশরাফি রাবির বোলিং, মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিং – সবাই মুগ্ধ। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারায়। যদিও আয়ারল্যান্ডের কাছে হারে, কিন্তু এটা ঐতিহাসিক।
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে। ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডকে হারায়। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ২০১৯-এও ভালো করে। এই সাফল্য আমাদের দেশে ক্রিকেটকে আরও জনপ্রিয় করেছে। টাইগাররা প্রমাণ করেছে, আমরা পিছিয়ে নেই।
ক্রিকেট খেলার উপকারিতা
ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ। এটা বুদ্ধির খেলা, কারণ কৌশল লাগে। বোলিং-এ গতি, ব্যাটিং-এ নির্ভুলতা। দৌড়ে শরীর ফিট হয়। ছেলে-মেয়েরা ক্রিকেট খেললে মোটা হওয়ার ভয় কম।
এছাড়া, এটা তরুণদের খারাপ পথ থেকে দূরে রাখে। দীর্ঘ ম্যাচে মন স্থির থাকে। দর্শকরাও উত্তেজিত হয়, কিন্তু শান্ত থাকে। ক্রিকেট টিমওয়ার্ক শেখায়। বন্ধুত্ব বাড়ায়। সুতরাং, ক্রিকেটের উপকার অনেক।
ক্রিকেটের বিশ্বায়ন
আইসিসি ক্রিকেটকে বিশ্বায়ন করছে। তারা নতুন দেশে টুর্নামেন্ট করে। যুক্তরাষ্ট্রে T20 বিশ্বকাপ হবে ২০২৪-এ। এতে ক্রিকেট আরও ছড়াবে। বাংলাদেশে নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশের সাফল্য অন্য দেশকে অনুপ্রাণিত করছে। ভবিষ্যতে আরও দেশ ক্রিকেট খেলবে। এটা শান্তির খেলা, যা দেশগুলোকে কাছে আনে। ক্রিকেটের বিশ্বায়ন আমাদের সকলের জন্য ভালো।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, এই রচনায় আমরা ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলাম। ক্রিকেট আমার প্রিয় খেলা, এবং আশা করি আপনাদেরও। এটা শুধু খেলা নয়, জীবনের শিক্ষা। ক্লাস ৭ এর ছাত্রছাত্রীরা এই রচনা পড়ে ক্রিকেট আরও ভালোভাবে বুঝবে। আরও তথ্যের জন্য আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
প্রশ্নোত্তর
১৯৭৫ সালে, লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল।
প্রত্যেক দল ২০ ওভার করে খেলে। এটা খুব দ্রুত এবং উত্তেজনাপূর্ণ।
২০০০ সালে। তারপর থেকে আমরা বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশ নিই।
দুটো দলে মিলে ২২ জন, প্রতি দলে ১১ জন।
৬টা বলের সমষ্টি একটা ওভার। বোলার এটা শেষ করলে অন্য বোলার আসে।










