বৃক্ষরোপণ রচনা ২০ পয়েন্ট
প্রিয় পাঠক, আজকের এই লেখায় আমরা বৃক্ষরোপণের বিষয় নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব। আমাদের দেশ বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিল্পায়নের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এখানে বৃক্ষরোপণ একটি সহজ কিন্তু কার্যকর সমাধান। এই লেখা পড়ে আপনি বুঝতে পারবেন কেন tree plantation in Bangladesh এত জরুরি এবং কীভাবে আমরা সবাই এতে অংশ নিতে পারি। চলুন, ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা
বৃক্ষরোপণ মানে শুধু গাছ লাগানো নয়, এটি আমাদের পৃথিবীকে সুস্থ রাখার একটি মৌলিক পদক্ষেপ। গাছগুলো আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে, কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে। বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। আমরা জানি, গাছের পাতা থেকে বের হওয়া অক্সিজেন আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অপরিহার্য। একটি পরিপক্ক গাছ দিনে প্রায় ২২০ পাউন্ড অক্সিজেন উৎপাদন করে, যা ১০ জন মানুষের এক বছরের চাহিদা মেটাতে পারে।
এছাড়া, বৃক্ষরোপণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে, এবং গাছ লাগানো এগুলোর তীব্রতা কমাতে পারে। গাছের শিকড় মাটিকে বাঁধ করে রাখে, যাতে বর্ষায় জলের গতি কমে এবং বন্যা রোধ হয়। ফলে, আমাদের কৃষিজমি সুরক্ষিত থাকে এবং খাদ্য উৎপাদন বজায় থাকে। বৃক্ষরোপণ শুধু পরিবেশের জন্য নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। গাছের ছায়ায় থাকলে মানসিক চাপ কমে, এবং বায়ুরোধী রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। সুতরাং, বৃক্ষরোপণকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে বনভূমির বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ খুবই কম, যা পরিবেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব সংস্থাগুলোর মতে, কোনো দেশের মোট জমির ২৫% বন হওয়া উচিত, কিন্তু আমাদের দেশে এটি মাত্র ১২-১৪%। এর মধ্যে সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বন আলাদা, কিন্তু ম্যানগ্রোভ বন ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বন কমছে। ঢাকার মতো শহরাঞ্চলে গাছের সংখ্যা আরও কম, যেখানে দূষণের মাত্রা উচ্চ।
এই অবস্থার কারণ জনসংখ্যার চাপ এবং অবাধ অবকাঠামো নির্মাণ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ শহরে আসছে, ফলে জমির দাবি বাড়ছে। ফলে, বনভূমি কৃষি এবং আবাসনের জন্য পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে সুসংবাদ হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বনের আয়তন কিছুটা বেড়েছে বৃক্ষরোপণ অভিযানের কারণে। উদাহরণস্বরূপ, স্লোপিং অঞ্চলে এবং নদীর পাড়ে গাছ লাগানো হয়েছে, যা মাটির ক্ষয় রোধ করছে। তবু, আমাদের আরও অনেক করতে হবে যাতে বনভূমি ২০% এ পৌঁছায়। এটি শুধু পরিবেশের জন্য নয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও জরুরি।
সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ অভিযান
বাংলাদেশ সরকার বৃক্ষরোপণকে জাতীয় কর্মসূচি করে তুলেছে। প্রতি বছর ১ জুন থেকে শুরু হওয়া বৃক্ষরোপণ মাসে লক্ষ লক্ষ চারা বিতরণ করা হয়। ২০২৪ সালে সরকারের লক্ষ্য ছিল ৮ কোটি গাছ লাগানো, যা অনেকাংশে সফল হয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং অফিসগুলোতে গাছ লাগানোর প্রতিযোগিতা হয়, যা যুবকদের আকর্ষণ করে।
বেসরকারি খাতেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এনজিওগুলো যেমন ব্র্যাক এবং গ্রামীণ ব্যাংক স্থানীয়ভাবে নার্সারি গড়ে তুলেছে। সামাজিক সংগঠন যেমন লায়ন্স ক্লাব এবং রোটারি ক্লাব রাস্তার পাশে এবং পার্কে গাছ লাগায়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার রমনা পার্কে বেসরকারি উদ্যোগে হাজার হাজার গাছ রোপিত হয়েছে। এছাড়া, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো সিএসআর প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে বৃক্ষরোপণ করে। এসব উদ্যোগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের চাবিকাঠি।
বৃক্ষরোপণের সুবিধা এবং প্রভাব
বৃক্ষরোপণের সুবিধা অসংখ্য। প্রথমত, এটি বায়ু দূষণ কমায়। শহরের রাস্তায় গাছ লাগালে ধুলো এবং কার্বন কমে, ফলে শ্বাসকষ্টের রোগ কমে। দ্বিতীয়ত, এটি জলসংরক্ষণ করে। গাছের শিকড় ভূগর্ভস্থ জল ধরে রাখে, যা খরায় সাহায্য করে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এমন অনেক প্রকল্প সফল হয়েছে।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক সুবিধা। ফলের গাছ লাগালে আয় হয়, এবং কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি হয়। গ্রামীণ নারীদের জন্য এটি আয়ের উৎস। এছাড়া, পর্যটন বাড়ায়। সুন্দরবনের মতো বন এলাকা পর্যটক আকর্ষণ করে। সামগ্রিকভাবে, বৃক্ষরোপণ আমাদের জীবনমান উন্নত করে।
বৃক্ষনিধনের কারণসমূহ বাংলাদেশে
বৃক্ষনিধন একটি বড় সমস্যা। প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বেশি মানুষের জন্য জমি দরকার, ফলে বন কাটা হয়। দ্বিতীয়ত, জ্বালানি হিসেবে গাছ ব্যবহার। গ্রামে অনেকে রান্নার জন্য কাঠ পোড়ায়। তৃতীয়ত, শিল্পায়ন। ইটভাটা এবং কারখানার জন্য গাছ কাটা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এতে বনের অর্ধেক নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া, সচেতনতার অভাব। অনেকে বোঝে না যে একটি গাছ কাটলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবৈধ কাঠের ব্যবসা এটিকে আরও খারাপ করে। ফলে, বনের পরিমাণ কমছে দ্রুত।
বৃক্ষনিধনের ক্ষতিকর পরিণতি
বৃক্ষনিধনের ফলে বন্যা বাড়ছে। গাছ না থাকলে জল দ্রুত বয়ে যায়, মাটি ক্ষয় হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে, বৃষ্টি অনিয়মিত। ফলে, কৃষি উৎপাদন কমছে এবং খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।
পরিবেশ দূষণও বাড়ছে। কার্বন বাড়ায় গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয়। বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়ে সাইক্লোন বাড়ছে। দীর্ঘমেয়াদে, দেশটি মরুবীকরণের মুখে পড়তে পারে। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিপদ।
বৃক্ষ রক্ষা এবং রোপণের উপায়সমূহ
বৃক্ষ রক্ষায় প্রথমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা প্রচার করা দরকার। দ্বিতীয়ত, কঠোর আইন প্রয়োগ। একটি গাছ কাটলে পাঁচটি লাগাতে হবে। সরকার এই নিয়ম কঠোর করুক। তৃতীয়ত, সচেতনতা বাড়ানো। স্কুলে বৃক্ষরোপণ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করুন।
ব্যক্তিগতভাবে, প্রত্যেকে বাড়ির পাশে গাছ লাগাক। ফলের, ফুলের এবং ঔষধি গাছ। মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করুন। পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করুন। এভাবে আমরা সবুজ বাংলাদেশ গড়তে পারি।
উপসংহার
বৃক্ষরোপণ আমাদের দায়িত্ব। প্রত্যেক বাংলাদেশী নাগরিক অন্তত তিনটি গাছ লাগাক: একটি ফলের, একটি ছায়ার এবং একটি ঔষধির। এতে আমরা পরিবেশ রক্ষা করব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সবুজ পৃথিবী দান করব। আসুন, হাতে হাত রেখে বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করি। আর নয় বিনাশ, হোক সৃষ্টির যুগ।
প্রশ্নোত্তর
বর্ষাকালে, জুন-জুলাই মাসে চারা লাগানো সবচেয়ে ভালো, কারণ প্রাকৃতিক জল পাওয়া যায়।
আম, কাঁঠাল, মহোগনি, অ্যাকেসিয়া এবং স্থানীয় প্রজাতি যেমন বটগাছ। এগুলো দ্রুত বাড়ে এবং পরিবেশের সাথে মানানসই।
গাছ কার্বন শোষণ করে গ্রিনহাউস গ্যাস কমায় এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় এনজিও-তে যোগ দিন বা নিজে নার্সারি শুরু করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।
আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা প্রচার। বিকল্প জ্বালানি যেমন গ্যাস ব্যবহার করুন।










