বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা রচনা সহজ ভাবে

Written by Jarif Al Hadee

Published on:

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা সম্পর্কে জানুন। এই রচনায় শাপলার সৌন্দর্য, বৈশিষ্ট্য, জাত, এবং এর জাতীয় প্রতীক হিসেবে গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। শাপলার রূপ ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে এই প্রবন্ধটি পড়ুন।

WhatsApp Group Join Now

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা রচনা

সূচনা

ফুল মানুষের হৃদয়ে আনন্দের সঞ্চার করে। বাংলাদেশের প্রকৃতি একটি লীলাভূমি, যেখানে বিভিন্ন ঋতুতে নানা রঙের ফুল ফুটে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলে। এই ফুলগুলোর মধ্যে শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে বিশেষ গৌরবের আসন অধিকার করে। এর নির্মল সৌন্দর্য ও সরলতা বাংলাদেশের জনগণের প্রাণের প্রতিচ্ছবি। এই রচনায় আমরা শাপলা ফুলের বৈশিষ্ট্য, এর বিভিন্ন জাত, এবং জাতীয় প্রতীক হিসেবে এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

শাপলা: বাংলাদেশের জাতীয় ফুল

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল স্থির পানিতে কোনো চাষাবাদ ছাড়াই জন্মায়। বর্ষাকালে যখন খাল, বিল, পুকুর, আর ধানের ক্ষেত পানিতে ভরে যায়, তখন শাপলা ফুল পানির উপর ভেসে উঠে অপরূপ দৃশ্য সৃষ্টি করে। এর সাদা পাপড়ি আর সবুজ পাতা যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে একটি অপূর্ব চিত্র এঁকে দেয়। শাপলার মূল মাটির গভীরে থাকে, যা শুকনো মৌসুমেও বেঁচে থাকে। বর্ষার পানি পেলে এই মূল থেকে নতুন কান্ড বা ডাঁটা গজায়। এই ডাঁটাগুলো পানির উপর ভেসে উঠে পাতা ও ফুল ফোটায়।

শাপলার পাতা থালার মতো গোলাকার, যা পানির উপর ভাসে। ফুলের ডাঁটা পাতার ডাঁটার থেকে আলাদা হয়ে থাকে। প্রথমে ফুলের মুচি বন্ধ থাকে, যেন কলার মুচির মতো। দুই-তিন দিনের মধ্যে এই মুচি পানির উপর উঠে আসে। রোদ আর বাতাসের স্পর্শে পাপড়িগুলো ধীরে ধীরে খুলে যায়, আর তখনই শাপলার পূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। বিল, পুকুর, বা দীঘির পানিতে শাপলার সাদা ফুল যখন সবুজ পাতার মাঝে ফোটে, তখন মনে হয় আকাশের তারা পানিতে ভেসে উঠেছে। এই নির্মল হাসি শাপলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা বাংলাদেশের সরল জনগণের প্রতীক।

শাপলার আরেকটি বিশেষত্ব হলো এর কোনো বাহ্যিক যত্ন বা চাষের প্রয়োজন হয় না। এটি নিজে থেকেই জন্মায় এবং নিজের মহিমায় ফুটে ওঠে। এ কারণেই শাপলাকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এর সৌন্দর্য শুধু প্রকৃতির নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক।

শাপলার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য

শাপলা ফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, এটি বাংলাদেশের প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্ষাকালে বিলের পানিতে শাপলার সবুজ পাতা যেন একটি সবুজ গালিচা বিছিয়ে দেয়, আর তার মাঝে সাদা ফুলগুলো হাসতে থাকে। এই দৃশ্য যে কারও মন কাড়ে। শাপলার সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, যিনি এটি দেখেননি, তিনি বাংলাদেশের পূর্ণ রূপ দেখেননি বললেই চলে।

শাপলার কয়েকটি জাত রয়েছে। সবচেয়ে পরিচিত হলো সাদা শাপলা, যা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এছাড়া লাল শাপলা এবং বেগুনি শাপলাও রয়েছে। লাল শাপলার ডাঁটা মোটা ও সতেজ হয়, যা বড় দীঘি বা পুকুরে জন্মায়। বেগুনি শাপলার ডাঁটা সরু এবং এটি অগভীর পানিতে ফোটে। তবে সাদা শাপলাই বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এর বিপুল পরিমাণ ফুল পানির উপর ছড়িয়ে থাকে, যা বাংলাদেশের প্রকৃতিকে আরও মনোরম করে।

শাপলার ব্যবহার

শাপলা শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এটি ব্যবহারিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। শাপলার কোমল ডাঁটা তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বর্ষাকালে গ্রামের হাটে নৌকায় করে শাপলার ডাঁটা বিক্রি হয়। এগুলো কৃষিজাত তরকারির তুলনায় অনেক সস্তা। শহরের বাজারেও শাপলার ডাঁটা পাওয়া যায়, যা অনেকের কাছে গ্রামের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। শাপলার এই ব্যবহার এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

জাতীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা

শাপলাকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে নির্বাচন করার পেছনে এর সরলতা ও প্রাচুর্যই মূল কারণ। গোলাপ, চাঁপা, যুঁই, বা গন্ধরাজের মতো ফুলের তুলনায় শাপলা বাংলাদেশের প্রকৃতির সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনেক ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় এবং তাদের চাষে ব্যয় ও যত্নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু শাপলা নিজে থেকেই ফোটে, কোনো বিশেষ যত্ন ছাড়াই। এটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের প্রতীক। এ কারণে শাপলা বাংলাদেশের মুদ্রায়ও স্থান পেয়েছে, যা এর জাতীয় গুরুত্বকে আরও উজ্জ্বল করে।

উপসংহার

শাপলা শুধু বাংলাদেশের জাতীয় ফুলই নয়, এটি আমাদের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সরল সৌন্দর্য এবং প্রাচুর্য বাংলাদেশের জনগণের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। এই রচনায় আমরা শাপলার রূপ, বৈশিষ্ট্য, এবং জাতীয় প্রতীক হিসেবে এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, এই লেখাটি পড়ে আপনি শাপলা ফুল সম্পর্কে আরও জানতে পেরেছেন এবং বাংলাদেশের প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ধন্যবাদ এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

প্রশ্ন-উত্তর সেকশন

শাপলা কেন বাংলাদেশের জাতীয় ফুল?

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কারণ এটি প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে জন্মায় এবং কোনো বিশেষ চাষের প্রয়োজন হয় না। এর সরলতা ও সৌন্দর্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে।

শাপলার কয়টি জাত রয়েছে?

শাপলার প্রধানত তিনটি জাত রয়েছে: সাদা শাপলা, লাল শাপলা, এবং বেগুনি শাপলা। সাদা শাপলাই জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃত।

শাপলার ডাঁটা কীভাবে ব্যবহৃত হয়?

শাপলার কোমল ডাঁটা তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এটি গ্রামের হাটে এবং শহরের বাজারে সস্তা দামে বিক্রি হয়।

শাপলা কখন ফোটে?

শাপলা সাধারণত বর্ষাকালে ফোটে, যখন খাল, বিল, পুকুর, এবং ধানের ক্ষেত পানিতে ভরে যায়।

DMCA.com Protection Status
Jarif Al Hadee

হ্যালো, আমি জারীফ আল হাদী- Jarif Al Hadee। আমি এই ওয়েবসাইটের এডমিন এবং একজন লেখক। আমি দীর্ঘ ৪ বছর ধরে শিক্ষা সম্পর্কিত লেখালেখির সাথে জড়িত। আমি পাঠকদের মানসম্মত ও আপডেটেড তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি আমার লেখাগুলোতে। যোগাযোগ- admissiongodesk@gmail.com।